প্রশ্ন: আমার সঙ্গে একটি ছেলের দীর্ঘদিন সম্পর্ক ছিল। আমরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছি। সে আমার চেয়ে দুই বছরের বড়। আমি তাকে অত্যন্ত ভালোবাসতাম এবং বিশ্বাস করতাম। বলতে দ্বিধা নেই, সম্পর্কে থাকা অবস্থায় আমি আমার বিভিন্ন ব্যক্তিগত ছবি তাঁর সঙ্গে শেয়ার করি। কিন্তু একপর্যায়ে আমাদের সম্পর্কে নানা জটিলতা দেখা দেয়। দুজনের সিদ্ধান্তে আমরা সম্পর্কটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিই।
এক বছর পর আমি পরিবারের পছন্দের একটি ছেলেকে বিয়ে করি। এখন আমার সাবেক প্রেমিক আমাকে নানাভাবে ভয় দেখাচ্ছে। তার সঙ্গে আমার অন্তরঙ্গ ছবি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলছে। সে বিভিন্ন ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে আমাকে নানা রকম ভীতিকর মেসেজ পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যে সে বলেছে, আমি যদি আমার স্বামীকে তালাক দিয়ে তার কাছে ফেরত না যাই, তাহলে সে আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে আমাদের অন্তরঙ্গ ছবি দেখাবে। সে আমার কাছে টাকাও দাবি করছে। আমি প্রচণ্ড আতঙ্ক ও ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমার স্বামীকে যদি সে এসব দেখায়, তাহলে আমি কিছুতেই বিয়ে টিকিয়ে রাখতে পারব না। আমার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সবাই অত্যন্ত রক্ষণশীল। আমার স্বামীকে আগের সম্পর্কের কথা কোনোভাবেই জানাতে পারব না। এখন আমি কি কোনো আইনি ব্যবস্থা নিতে পারি? আবার ভাবছি, আইনি ব্যবস্থা নিলে জানাজানি হবে। তখন আমার কী হবে?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮-এর ২৫ ধারায় বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করে, যা আক্রমণাত্মক বা ভীতিপ্রদর্শক বা মিথ্যা জেনেও কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ বা প্রচার করে, তাহলে এর জন্য তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এ অপরাধের শাস্তি হিসেবে অনধিক তিন বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক তিন লাখ টাকা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কেউ এ ধরনের অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করলে অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। সে যেহেতু ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে আপনাকে হুমকি দিচ্ছে ও ভীতি প্রদর্শন করছে, আপনি তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করতে পারবেন।
আপনার সাবেক প্রেমিক আপনাকে ব্ল্যাকমেল করে টাকা আদায় করতে চাইছে, কাজেই ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারা অনুযায়ী এ ধরনের ব্ল্যাকমেলকে চাঁদাবাজির আওতায় ফেলা যাবে। ৩৮৪ ধারা অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড।
ব্ল্যাকমেলিং একটি জঘন্য অপরাধ। দেশের প্রচলিত সব আইন সম্পূর্ণরূপে আপনার পক্ষে। আপনি অতি দ্রুত নিকটস্থ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন। প্রয়োজনে জিডির কপি নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) হেডকোয়ার্টারে অবস্থিত সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। এ ছাড়া দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পুলিশের ‘হ্যালো সিটি’ অ্যাপের মাধ্যমে অভিযোগ দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারেন।